ব্যবসায়ে ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব

ব্যবসার সমৃদ্ধির জন্য ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব অপরিসীম, এর মাধ্যমে আপনার ব্যবসার বর্তমান অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে । ক্রেতা সাধারণের কাছে আপনার ব্যবসাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য যা যা করা যেতে পারে তার সমষ্টি হচ্ছে ব্রান্ডিং। ব্রান্ডিং এর অনেকগুলো দিক আছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় নিচে আলোচনা করা হলো।

. ব্যক্তিত্ব বা ব্র্যান্ড পার্সোনালিটি

আপনার ব্যবসা বা পণ্যের ‘পারসোনালিটি’ থাকতে হবে। মার্কেটিং শাস্ত্রের পরিভাষায় ব্র্যান্ড পার্সোনালিটি। যে কোন ব্যবসার একটি সত্ত্বা থাকে। একজন মানুষ কেমন, অর্থাৎ কি রংয়ের, কোন ডিজাইনের পোশাক পরে, তার চলাফেরা কিরকম, কিভাবে সে কথা বলে, তার সততা ও আচরণ- সব মিলিয়ে একটি ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়। ঠিক তেমনি একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার ক্রেতাগোষ্ঠীর সাথে কিভাবে ডিল করে, কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে। তার ডিজাইন, রং, প্যাকেজিং, গুণগতমান, সার্ভিস- সব মিলিয়ে একটি ‘ব্যক্তিত্ব’ তৈরি হয়। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে পর্যায়ক্রমে এই ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে হয়। তাহলে এক সময় ক্রেতার মনে জায়গা করে নিতে পারে।

. ধারাবাহিকতা

আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা খুব জরুরী। এই ধারাবাহিকতার ধারণা ক্রেতা গোষ্ঠীর মনে বোধগম্য হবে তখন যখন আপনার ডিজাইন প্যাকেজিং শো রুম সাজানো প্রভৃতি আয়োজনে একটি ছন্দ বজায় থাকবে। যেমন আপনি যদি আপনার কালার থিম সিম্পল রাখেন যেমন হালকা বেগুনি কালার সাথে সাদার মিশ্রন অথচ আপনার শোরুমের পণ্য সাজানো এবং আলোকসজ্জা তা করলেন খুবই  চটকদার লাল হলুদ প্রভৃতি ব্যবহার করে। এরকম ক্ষেত্রে আপনার ক্রেতাগনের মনে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে, ব্যাহত হবে আপনার ইমেজের ধারাবাহিকতায়। অর্থাৎ বিজ্ঞাপন বা প্যাকেজিং এর ডিজাইন শোরুম বা অফিসের আয়োজন ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে চমৎকার ছন্দ বজায় রাখতে হবে। এতে আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা গোষ্ঠীর মনে একটি ইতিবাচক ধারাবাহিকতার ধারণা প্রতিষ্ঠা পাবে।

নজরকাড়া উপস্থাপন

আপনার পণ্য বা সেবার অনেক প্রতিযোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে নিজেকে জায়গা করে নিতে হলে, পণ্য বা সেবার গুণগত মান, ডিজাইন, পরিবেশনা, ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ এবং সামগ্রিক উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আলাদা কারতে হবে। এজন্য প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডগুলোকে অনুসরণ করা যাবে না। আপনাকে অবশ্যই নিজস্বতা দেখাতে হবে। একটি বিশাল শপিং কমপ্লেক্সে পাশাপাশি প্রচুর দোকান থাকে একই পণ্য নিয়ে। এর মধ্যেই ডিজাইন, আলোকসজ্জা, বিক্রয়কর্মীদের আচরণ- সব কিছু দিয়ে আলাদা নজর কাড়তে হবে।

. ক্রেতার মনে জায়গা করে নেয়া

হাজারো প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের ভিড়ে আপনি সীমিত সময় পাবেন মানুষের মন জয় করতে। তবে আপনার যদি লক্ষ্য থাকে ক্রেতার মন জয় করবেন, সেজন্য যদি পরিকল্পনা থাকে তাহলে প্রথম দেখাতেই এমন কিছু করবেন যেন ক্রেতার মনে একটি সুন্দর স্মৃতি তৈরি হয়। আপনার পণ্যের গুণগত মান, প্যাকেজিং ডিজাইন, কর্মীর আচরণ, স্মার্ট কথা- সব মিলিয়ে ক্রেতার মনে একটি ভালো স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা তৈরির সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। প্রথম সুযোগেই এমন চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা প্রদান করলে ক্রেতা নিজের মনেতো অবশ্যই জায়গা করবে, তার বন্ধুমহলে আপনার ব্যবসার গল্প ছড়িয়ে যেতে পারে অনেক সময়।

. ক্রেতাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি

ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক যেমন খুব গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে ক্রেতার সম্পর্ক তৈরি করতে পারা অনেক মূল্যবান। যখন কাস্টমার কেয়ারে নতুন অথবা পুরনো কোনো ক্রেতার যোগাযোগ ঘটে তখন যদি ক্রেতা-সন্তুষ্টি তৈরি করা যায় তাহলে প্রতিষ্ঠান বা পণ্যের সাথে ক্রেতার সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্ক অবশ্যই আপনার ব্যবসায়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

সবমিলিয়ে বলতে হয়, ব্যবসা বা পণ্যের ‘ব্যক্তিত্ব’, ধারাবাহিকতা, স্বতন্ত্রতা, ক্রেতাগোষ্ঠীর মনে জায়গা করে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক তৈরি করতে শুরু থেকেই পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যা সময়ের সাথে সাথে ব্যবসাকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here