বর্তমানে ই-কমার্স বা অনলাইনভিত্তিক যেকোন ব্যবসা খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কারণ খুব কম আয়োজনের মাধ্যমে এবং কম পুজির মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা শুরু করা যায়। অল্প পুঁজি নিয়ে ব্যবসায়ের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। যা প্রচলিত ব্যবসার ধরন থেকে ভিন্ন।

ই-কমার্সের এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনিও শুরু করতে পারেন ব্যবসায়িক উদ্যোগ। এ জন্য পরিকল্পনা করতে গিয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হল কোন ধরনের পণ্যকে কেন্দ্র করে ব্যবসা শুরু করবেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা আপনি পরিস্থিতি বিবেচনা করে গ্রহণ করবেন। তবে নিচের পাঁচটি বিষয়ে মনোযোগ দিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে।

১. এমন পণ্য বেছে নিন যা মানুষের সমস্যার সমাধান দিতে পারে

যেমন, অনেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় চিন্তা করে। এজন্য কিছু উপকরণ বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। স্মার্ট গ্যাজেট হিসেবে এ ধরনের পণ্য বিভিন্ন রকমের অভিনব সমাধান দিয়ে থাকে। সেন্সরভিত্তিক এক ধরনের পণ্য রয়েছে যা ঘরে মানুষ থাকলে বৈদ্যুতিক বাতি, ফ্যান, এসি চালু থাকে আবার কেউ ঘরে না থাকলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। আপনি এ ধরনের পণ্য নিয়ে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করতে পারেন, যার মাধ্যমে অল্প সময়ে জনপ্রিয়তা পেতে পারেন। আপনি যদি আস্থা অর্জন করতে পারেন তাহলে এই কাস্টমাররা আপনার কাছ থেকে এ ধরনের আরো পণ্য কিনতে উৎসাহী হবে ভবিষ্যতে।

২. যেসব পণ্যে আপনার নিজের এবং ক্রেতাদের আগ্রহ রয়েছে

প্রচুর কাস্টমার রয়েছে যাদের কিছু কিছু পণ্যের প্রতি এক ধরনের আবেগ কাজ করে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরন লেটেস্ট মডেলের মোবাইল সেট কেনা। যদিও মোবাইল ফোন কথা বলা এবং কিছু অ্যাপ চালানোর জন্য কেনা হয়। এজন্য হাতের বর্তমান ফোনটি যথেষ্ট হলেও, বিজ্ঞাপন এবং অন্যান্য মাধ্যমে যখন জানা যায় নতুন ডিজাইন ও ফিচার নিয়ে ফোন এসেছে তখন এসব ক্রেতারা এমন সেটের মালিক হতে অস্থির হয়ে পড়ে। এখানে প্রয়োজনের চেয়ে বিশেষ কোন প্রোডাক্টের প্রতি আবেগ বা আগ্রহ কাজ করে। উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার নিজের এমন আগ্রহ থাকতে পারে। তাই নিজের আগ্রহ এবং টার্গেটেড কাস্টমারদের আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে বিশেষ কোনো পণ্য নিয়ে আপনার অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

৩. যেসব পণ্যের ব্র্যান্ড তৈরি হওয়া সহজ

বিভিন্নভাবে আপনি জানতে পারলেন বাজারে নতুন কোন ব্রান্ড যুক্ত হতে যাচ্ছে। বড় প্রতিষ্ঠানের যখন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে নিজের ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু করে তখন অনেকের কাছ থেকে সাড়া পায় না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা আগ্রহ নিয়ে নতুন ব্র্যান্ডকে আপন করে নিতে উৎসাহী হয় তাদেরকে ঐসব প্রতিষ্ঠান বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতেও মূল্যায়ন করে। আপনার সামনে এমন সুযোগ আসলে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

৪. নতুন ধারণা সামনে আসলে কাজে লাগান

বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে কিছু কিছু পণ্য বা সেবার নতুন নতুন ধারনার সৃষ্টি হয়। এ জন্য বিশ্বজুড়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়। ফলে ধারণাতীত অফার দেয়া হয় নতুন পণ্যকে বাজারে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে। এমন কোনো সুযোগ পেলে তা কাজে লাগিয়ে নিজের অনলাইন ব্যবসাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন।

৫. কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য বিবেচনা করুন

সাধারণভাবে প্রচলিত যত বিক্রি তত লাভ- এই ধারণার বিপরীতে আরেকটি চমৎকার ধারা রয়েছে যাকে বলা হয় নিশ মার্কেট বা প্রয়োজন অনুপাত পণ্য সর্বরাহ। এতে বিক্রির পরিমাণ বড় বিষয় নয় বরং অল্প বিক্রি বেশি মুনাফা এখানে মুখ্য ব্যাপার। ক্রেতাদের মধ্যে চমৎকার একটি অংশ রয়েছে, যারা বেশি মূল্য দিতে প্রস্তুত সঠিক পণ্য বা সেবার জন্য। সাধারণভাবে শত শত ইউনিট বিক্রিতে যত মুনাফা হয়ে থাকে, নিশ মার্কেটে সঠিক পণ্যের জোগান দিতে পারলে কয়েক ডজন ইউনিট বিক্রি করে তার চেয়ে বেশি মুনাফা হতে পারে। এমন বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারেন যদি আপনার আত্মবিশ্বাস শক্তিশালী হয়।

অনলাইন ব্যবসার উদ্যোগ নিতে গেলে টার্গেট কাস্টমার, বাজার পরিস্থিতি, প্রতিযোগিতা প্রভৃতি নিয়ে কিছু গবেষণা করতে হয়। এক্ষেত্রে নিজের সক্ষমতা, ভালোলাগা এবং অভিনবত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সঙ্গে সেরকম বোঝাপড়া করে সঠিক টার্গেট কাস্টমার বিবেচনায় নিয়ে আপনার অনলাইন ব্যবসার উদ্যোগ শুরু করতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here